‘নাম কাটছে ভ্যানিশকুমারেরা’! জ্ঞানেশ, মনোজদের নিশানা মমতার, এআই দিয়ে ভোটার তালিকায় কারচুপিরও আশঙ্কা
ভোটারদের নামের বানানে সামান্য এদিক ওদিক দেখলেও তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মমতা। নির্বাচন কমিশনের অফিসে বিজেপির এজেন্ট রেখে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের খসড়া তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে একের পর এক আক্রমণ শানালেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভ্যানিশকুমার’ বলেও বিঁধলেন কমিশনকে। তৃণমূলনেত্রীর প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় আদ্যান্ত নিশানায় রইল জ্ঞানেশ কুমারের নির্বাচন কমিশন এবং মনোজকুমার আগরওয়ালের সিইও দফতর।
কমিশনের অফিস থেকে বিজেপির এজেন্ট ইচ্ছামতো নাম বাদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন মমতা। একইসঙ্গে কৃত্রিম মেধা (এআই) ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় কারচুপি করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে তৃণমূলনেত্রীর।
রাজ্যে ভোটারদের খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে এসআইআর-এর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। শুনানির জন্য ভোটারদের নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। এ অবস্থায় সোমবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোরে দলের বুথস্তরের এজেন্ট (বিএলএ)-দের নিয়ে সভা করলেন মমতা। সেখান থেকেই বিজেপির সঙ্গে কমিশনের আঁতাতের তত্ত্ব ফের উস্কে দিলেন তিনি।
তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিজেপির অফিস থেকে যা বলে দেওয়া হচ্ছে, তা-ই চেঞ্জ করা হচ্ছে। আমি শুনেছি নির্বাচন কমিশনের অফিসে বিজেপি একটা এজেন্ট রেখে দিয়েছে। সে অনলাইনে যাঁর ইচ্ছে নাম বাতিল লিখছে। পুরো লিস্টটা করে দিচ্ছে বিজেপির পার্টির লোকেরা। এমন নির্লজ্জ কমিশন আমি জীবনে দেখিনি, দেখতেও চাই না।” বক্তৃতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলনেত্রীর নিশানায় ছিল কমিশন এবং বিজেপির সঙ্গে তাদের আঁতাতের তত্ত্ব।
এ বছর রাজ্যে এসআইআর-এর কাজের জন্য কৃত্রিম মেধা-র সাহায্য নিচ্ছে কমিশন। কিন্তু সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় কারচুপি হতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে তৃণমূলনেত্রীর। দলীয় বিএলএ-দের কী করণীয়, সে বিষয়ে দিক্নির্দেশ দেওয়ার সময়ে মমতা বলেন, “এখন আবার এআই (ব্যবহার) করেছে শুনলাম। ধরুন আমার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি যখন ভোট দিতে গেলাম, দেখলাম এআই-এ আর একটা নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে রেখে দিয়েছে। অর্থাৎ আমি ভোটটা দিতে পারলাম না। তাঁর নামে ভোটটা চলে গেল। বুদ্ধি খরচ করুন।”
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ তাড়াহুড়োর মধ্যে করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ আগেও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলীয় সভা হোক, বা প্রশাসনিক কর্মসূচি, সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর থেকে ফের এক বার সেই অভিযোগ তুললেন তিনি। মমতার বক্তব্য, শুধুমাত্র বিজেপির কথায় অপরিকল্পিত ভাবে এই এসআইআর করা হচ্ছে। বিজেপি এবং কমিশনকে একই বন্ধনীতে ফেলে মমতার আক্রমণ, “তোমরা চক্রান্ত করেও কিচ্ছু করতে পারবে না।” কমিশনের অপরিকল্পিত পদক্ষেপের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “নির্বাচন কমিশন এক বারও কি ভেবেছেন? ভ্যানিশকুমারবাবুরা, বিজেপির দালালেরা একবারও ভেবেছেন?”
সম্প্রতি রাজ্যের যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ইতিমধ্যেই বহু ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, “আরও দেড় কোটি নাম নাকি বাদ দিতে হবে। বিজেপির খোকাবাবুদের আবদার।” বিভিন্ন ধরনের চালাকি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে তৃণমূলনেত্রী বলেন, “চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না।”
ভোটারদের নামের বানানে সামান্য এদিক ওদিক দেখলেও তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ মমতার। তৃণমূলনেত্রী জানান, আগে কলকাতায় ১০০টি ওয়ার্ড ছিল। পরে ওয়ার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৪৪টি। এর মধ্যে আসন পুনর্বিন্যাসও হয়েছে। ফলে ২০০২ সালে কোনও ভোটারের যে ঠিকানা ছিল, এখন সেই ঠিকানা বদলে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এই বিষয়গুলি বিবেচনা না করেই ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “বিএলও-দের নামে গালাগালি দেওয়ার আগে ট্রেনিং দিয়েছিলেন? পুরোটাই অপরিকল্পিত। বিজেপির কথায় বিজেপি কমিশন করেছেন। যত কেস করবেন, করবেন। চাইলে গলাটাও কেটে নিতে পারেন। কিন্তু আমি মানুষের কথা বলব। কাউকে না কাউকে তো মুখ খুলতে হবে। সবাই যদি ভয়ে গুটিয়ে যায়, তা হলে তো দেশটাই শেষ হয়ে যাবে। বাংলা না থাকলে, দেশটা থাকবে না। মাথায় রাখবেন।”
শুধু আসন পুনর্বিন্যাস ঘিরেই সমস্যা নয়। আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ মমতার। বাংলা এবং ইংরেজিতে ভাষাগত পার্থক্যের কারণে নামের বানানও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়। শুধুমাত্র নামের বানান আলাদা হওয়ার কারণে অনেকের নাম বাদ পড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। পাশাপাশি বিয়ের পরে মহিলাদের অনেকে পদবি বদল করার ফলেও তাঁদের নাম বাদ পড়ে যাচ্ছে, এমন অভিযোগও তোলেন মমতা। তাঁর আরও অভিযোগ, এই ধরনের বানান বিভ্রান্তির জন্য এক জনকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে।